
সম্প্রতি যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ‘দি ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর একটি পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ড. ইউনূস ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা এবং হাজার হাজার সামরিক কর্মীদের বরখাস্ত চূড়ান্ত করেছেন। পোস্টের এই প্রতিবেদন অনুযায়ী- ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছাড়তে বাধ্য হন বলে জানানো হয়েছে। এর কিছুদিন পর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান পদত্যাগ করেন। এই ঘটনাগুলি দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়িয়েছে। ড. ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার বিভিন্ন ছাত্রগোষ্ঠীর মাধ্যমে প্রতিবাদ সংগঠিত করার পরিকল্পনা করছে, যা পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করছে। বিশ্বস্ত সূত্র অনুযায়ী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৬৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৩,৮৭২ জন সামরিক সদস্যকে বরখাস্তের তালিকা তৈরি করেছে। ধারণা করা হচ্ছে যে, এটি সেনাবাহিনীর মধ্যে বড় ধরনের পুনর্গঠন এবং বেসামরিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা।এই পদক্ষেপের ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং সামরিক বাহিনীর কার্যকারিতা প্রভাবিত হতে পারে।
এই প্রতিবেদন শেয়ার করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তার ক্যাপশনে লিখেছনে,” ড. ইউনূসের বিষয়ে আমেরিকার ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা ভয়াবহ নিউজ প্রকাশ করেছে৷ ইউনূস সরকারের ছাত্র গ্রুপ যে জঙ্গিবাদের সাথে যুক্ত সেটা স্পষ্ট উল্লেখ করেছে পত্রিকাটি। শুধু তাই নয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে অপসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছিলো ছাত্রদের দ্বারা মব জাস্টিস ঘটিয়ে। তারপর সেনাপ্রধান ওয়াকার, ৬৭ জন সিনিয়র আর্মি অফিসার, ৩৮৭২ জন মিলিটারি অফিসারকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনা ছিলো ইউনূসের। এসবই বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জেনেছে পত্রিকাটি।“
তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি যে দি ওয়াশিংটন পোস্ট এরকম কোন প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা এবং হাজার হাজার সামরিক কর্মীদের বরখাস্ত করা নিয়ে দি ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদনটি বানোয়াট।
তথ্য যাচাইঃ
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে ফেসবুক পোস্টের প্রতিবেদনটি খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে প্রতিবেদনটির শিরোনাম, “INTERIM GOVERNMENT LED BY DR. YUNUS FINALIZES DISMISSAL OF SENIOR ARMY OFFICERS AND THOUSANDS OF MILITARY PERSONNEL”-কে গুগল সার্চ ইঞ্জিনে কপি পেস্ট করি। ফলে, এই শিরোনামে দি ওয়াশিংটন পোস্ট-এর কোন প্রতিবেদন পাওয়া যায়না।
পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবেদনটি ২১ অক্টোবর তারিখে প্রকাশিত পেয়েছে যার প্রতিবেদক ছিলেন- জ্যাকি অ্যালিমানি। এটিকে সূত্র ধরে গুগল সার্চের মাধ্যমে জানতে পারি ওয়াশিংটন পোস্টে ‘জ্যাকি অ্যালিমানি’ নামের কোন সাংবাদিক নেই। তাহলে হ্যাঁ, জ্যাকলিন অ্যালিমানি নামের একজন মহিলা সাংবাদিক রয়েছেন এবং ২১ অক্টোবরে তার লেখা একটি প্রতিবেদন প্রকাশ পেয়েছে ‘দি ওয়াশিংটন পোস্টে’ যার বিষয়বস্তু অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূস কর্তৃক ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা এবং হাজার হাজার সামরিক কর্মীদের বরখাস্ত করা ছিল না।
আরও খুঁজাখুঁজির পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এর ফ্যাক্ট চেক ফেসবুক পেজে এই প্রতিবেদন সম্বলিত একটি পোস্ট পাওয়া যায় যেখানে প্রতিবেদনটি শেয়ার করে লেখা হয়েছে,”সম্প্রতি জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় একটি কুচক্রী মহল ওয়াশিংটন পোস্টের নামে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে একটি ভুয়া প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংকে নিশ্চিত করেছে যে প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট । সকলকে কোনো ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।“
তাছাড়া, ওয়াশিংটন পোস্ট সম্পর্কিত তথ্য প্রচারকারী একটি এক্স হ্যান্ডেল থেকেও ভাইরাল এই প্রতিবেদনকে ভুয়া বলে আখ্যায়িত করে লেখা হয়েছে,”অনুগ্রহ করে মনে রাখবেন: এটি একটি জাল ছবি যা প্রচার করা হচ্ছে।“
তারপর, এই বিষয়ে আরও জানতে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন পাওয়া যায় যেখানে ভাইরাল এই ওয়াশিংটন পোস্টের এই প্রতিবেদনকে ভুয়া বলে জানানো হয়েছে। চ্যানেল২৪ প্রতিবেদন, আজকের পত্রিকা।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ড. ইউনূস ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা এবং হাজার হাজার সামরিক কর্মী বরখাস্ত করার বিষয়ে দি ওয়াশিংটন পোস্ট-এর নামে প্রচারিত প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণভাবে বানোয়াট। এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তরফ থেকে নেওয়া হয়নি, এবং দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট থেকেও এমন কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।

Title:হাজার হাজার সামরিক কর্মী বরখাস্ত করা নিয়ে দি ওয়াশিংটন পোস্ট-এর নামে প্রচারিত প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণভাবে বানোয়াট
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: False