সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার সময় এক হিন্দু ছেলের গলা থেকে ঠাকুরের লকেট খুলে দেওয়া হয়েছে। ১৭ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপে এক মৌলবি সাহেবকে এক বাচ্চা ছেলের গলা থেকে লকেট জাতীয় কিছু একটা খুলে নিতে দেখা যাচ্ছে। লকেট পরে থাকাকে বড় পাপ বলে জানিয়ে হুজুর ছেলেকে বোঝালেন এবং আল্লাহর প্রশংসা করলেন। ভিডিওর উপরে লেখা হয়েছে,”নোয়াখালী ত্রাণসামগ্রী বিতরণ সাথে ছেলেকে শিরক মুক্ত করা হলো।

ভাইরাল এই ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”বাংলাদেশ নোয়াখালীতে ত্রাণ সামগ্রী দিয়ে হিন্দু ছেলের গলা থেকে হনুমানজীর লকেট খুলে নেওয়া হল সঙ্গে লেখা শিরক মুক্ত করা হলো এটার মানে কি বন্ধুরা বাংলাদেশে হিন্দুদের উপর কিরকম অত্যাচার চলছে।“

অন্য এক ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”ত্রান দিতে গিয়ে এক মৌলবি হিন্দু শিশুর গলা থেকে তুলসী মালা খুলে ফেলছে।“

তথ্য যাচাই করে আমরা পেয়েছি দাবিটি মিথ্যা। ভিডিওর ছেলেটি হিন্দু নয়, মুসলিম, তার নাম সোহেল এবং বাবার নাম আব্দুল হক।

ফেসবুক পোস্ট, ফেসবুক পোস্ট

তথ্য যাচাইঃ

ভাইরাল এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওর কি ফ্রেমগুলোকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, একই রকমের দৃশ্য ‘তাওহীদ একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টার’ নামের এক ফেসবুক পেজের দীর্ঘ ভিডিওর ২৭ সেকেন্ডের মুহূর্তে দেখতে পাওয়া যার ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”আলহামদুলিল্লাহ, নোয়াখালীর বন্যার্তদের মাঝে ২০০+ পরিবারকে ত্রান সামগ্রী বিতরন তাওহীদ একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টার এর পক্ষ থেকে।“

ভিডিওটি সাম্প্রদায়িক আঙ্গেলে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পরে পরেই ‘তাওহীদ একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টার’-এর পেজ থেকে ছেলেটির একটি ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন,”সম্প্রীতি ভাইরাল হওয়া ছেলেটির মুখে শুনুন ছেলেটি হিন্দু নাকি মুসলিম। গুজবকে সবাই প্রতিহত করুন।“

ভিডিওতে ছেলেটি বলছে তার নাম সোহেল। বাবার নাম- আব্দুল হক, মায়ের নাম- রুজিনা। সে নিজেকে মুসলিম ধর্মাবলম্বী বলেই জানাচ্ছে। শেষে কালেমা, যা মুসলিম হওয়ার প্রাথমিক শর্ত, তাও পাঠ করছে।

ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো ‘তাওহীদ একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টার’-এর সাথে যোগাযোগ করে। তিনি আমাদের জানিয়েছেন,’যিনি তাবিজটা চিড়ে ফেলেছেন তার নাম- আব্দুল মালেক মিয়াজী। যিনি জামিয়া দারুত তাওহীদের সহকারী প্রধান শিক্ষক। তাওহীদ একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টারের উদ্যোগে ওনারা নোয়াখালিতে বন্যার্তদের মাঝে ত্রান বিলি করতে গিয়েছিলেন। বাচ্চার নাম- সোহেল/সহেল বাচ্চার বাবার নামঃ আব্দুল হক বাচ্চার মায়ের নামঃ রুজিনা খাতুন গ্রামঃ চর আলগী, উপজেলাঃ কবির হাট সেনবাগ, জেলাঃ নোয়াখালী। বাচ্চাটি স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় তৃতীয় শ্রেনিতে পড়েন।“প্রসঙ্গত, তার গলার জিনিসটিকে বলা হয় তাবিজ যা অশুভ শক্তি থেকে রক্ষাকারী বলে বিশ্বাস করা হয়। তাওহীদ একাডেমি এন্ড ইসলামিক সেন্টারের সদস্যরা হলেন সালাফী/আহলে হাদীসের অনুসারী। তারা এই তাবিজের বিরুদ্ধে। তারা বিশ্বাস করে যে পরিধান করলে আপনি শিরক করলেন। শিরক হল আল্লাহর প্রভুত্ব, উপাসনা বা তাঁর নাম ও গুণাবলীতে অংশীদার বা প্রতিদ্বন্দ্বীকে শরীক করা। তাই তারা ছেলেটির গলা থেকে এটি সরিয়ে দিয়েছিল।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, বাংলাদেশে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রান বিতরনের সময় হিন্দু ছেলের গলা থেকে তুলসি মালা বা কোন হিন্দু ঠাকুরের লকেট খুলে নেওয়ার দাবিটি মিথ্যা। ছেলেটি মুসলিম। তার নাম সোহেল।

Sources

Tawheed Academy and Islamic Center- FB Video
https://www.facebook.com/watch/?v=431223372655825

Tawheed Academy and Islamic Center- Clarification
https://www.facebook.com/reel/2221476704902623

Claim Review :   বাংলাদেশে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার সময় এক হিন্দু ছেলের গলা থেকে ঠাকুরের লকেট খুলে নেওয়া হচ্ছে।
Claimed By :  Social Media User