মাদ্রাসা থেকে জিহাদের ডাক দেওয়ার নামে ভাইরাল ভিডিওর আসল তথ্য জানুন

Communal False

সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে বাংলাদেশের যশোর ইসলামিয়া মাদ্রাসা থেকে জিহাদের ডাক দেওয়া হয়েছে। ভাইরাল ভিডিওতে তিন জন ব্যক্তি একটি স্টেজে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। এর মধ্যে দুজনের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা এবং হাতে বন্দুকের মতো বস্তু রয়েছে। মাঝখানে সাদা কাপড়ে মুখ মোড়া একজন ব্যক্তি আরবিতে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং তাঁকে গার্ড করছেন। এই পুরো ঘটনা স্টেজে বসে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি লক্ষ্য করছেন।

এই ভিডিওটি শেয়ার করে একজন লিখেছেন,”ব্রেকিং নিউজ!!! AK-47 রাইফেল নিয়ে যশোরে জঙ্গিদের ওপেন সমাবেশ। এবার প্রকাশ্যে জিহাদের ঘোষণা জঙ্গিদের। যশোরের এক মাদ্রাসাতে অস্ত্র হাতে জঙ্গী গোষ্ঠী আই,এস,আই এর পতাকা মাথায় বেঁধে জিহাদের ডাক। এটাই ইউনুসের বাংলাদেশ!!! দেশ টা শেষ এবার আল্লাহ রক্ষা করো।“ 

আবার অন্য এক গেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন,”প্রকাশ্যে জঙ্গিদের জিহাদের ডাক! যশোরের এক মাদ্রাসায় অস্ত্র হাতে আই*সি*স পতাকা মাথায় বেঁধে জঙ্গিদের জিহাদের ঘোষণা। ইউনুস-আসিফ নজ্রুল গংদের নতুন বাংলাদেশ।।“ 

তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, ভিডিওটির দাবি বিভ্রান্তিকর। এটি আসলে “যেমন খুশি তেমন সাজো” অনুষ্ঠানের একটি অংশ এবং এতে কোনো জিহাদের ডাক দেওয়ার ঘটনা নেই।

https://www.facebook.com/61570844455248/videos/1994078921090987

ফেসবুক পোস্ট, ফেসবুক পোস্ট, ফেসবুক পোস্ট, আর্কাইভ 

তথ্য যাচাইঃ  

গুগলে প্রাসঙ্গিক কীওয়ার্ড সার্চ করলে আমরা ‘বিবিসি’র  একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের যশোর জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার। চলতি মাসের ১৭ ও ১৮ তারিখে মাদ্রাসার প্রাঙ্গনে আয়োজিত বাৎসরিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অংশ ছিল এটি। অনুষ্ঠানে একটি বিষয় ছিল ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ যেখানে মাদ্রাসার কিছু ছাত্র প্যালেস্টাইনের মুক্তির সংগ্রাম উপস্থাপন করতে হামাস নেতার মতো পোশাক পরেছিল।

প্রতিবেদন আর্কাইভ 

সেই মাদ্রাসার শিক্ষকগণ গণমাধ্যমকে একই তথ্য নিশ্চিত করেছেন এবং জানিয়েছে যে ভিডিওতে দেখা যে বন্দুকগুলি, সেগুলি শোলার তৈরি। তারা আরও জানিয়েছে যে ভিডিওটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের একটি অংশ এবং এতে কোনও সন্ত্রাসী বা জিহাদী উদ্দেশ্য ছিল না। আরও বিস্তারিত জানার জন্য নীচে ভিডিও উপস্থাপন করা হয়েছে।

পোস্টের এই ভিডিও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর, ‘যশোর জামিয়া ইসলামিয়া’ মাদ্রাসার ফেসবুক পেজ থেকে একটি লাইভ সেশন আয়োজন করা হয়। এই লাইভ সেশনে মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা মহাপরিচালক মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকি জানান ছাত্রদের বক্তব্যে জিহাদের কোনো প্রসঙ্গ ছিল না। বরং তাদের উদ্দেশ্য ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বার্তা দেয়া। তিনি আরও জানান যে, ভিডিওতে দেখা যে বন্দুকগুলো, সেগুলি আসল নয় বরং শোলার উপর কালো টেপ প্যাঁচানো ছিল যা শুধুমাত্র প্রতীকী ছিল।

মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার মঞ্চস্থ নাটকের দৃশ্যকে ভুয়ো দাবির সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে। তারা জানান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ এবং মঞ্চস্থ নাটকের ভুল ব্যাখ্যা সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে।

যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নুর ই আলম বলেছেন,“মাদ্রাসার তিন ছাত্র ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ প্রতিযোগিতার অংশ হিসেবে এতে অংশ নেন। পরবর্তীতে পুলিশ মাদ্রাসায় গিয়ে সরেজমিনে অস্ত্র সদৃশ দুটি বস্তু উদ্ধার করে। উদ্ধার করে দেখা যায় এগুলি আসলে ককশিট এবং কাঠের তৈরি খেলনা।”

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, বাংলাদেশের মাদ্রাসা থেকে জিহাদের ডাক দেওয়ার নামে ভাইরাল দাবিটি সঠিক নয়। ভাইরাল ভিডিওটি আসলে ‘যেমন খুশি তেমন সাজো’ অনুষ্ঠানের অংশ। মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র প্যালেস্তাইনের মুক্তির সংগ্রাম উপস্থাপন করতে চেয়ে হামাস নেতার মতো পোশাক পরেছিলেন। 

Avatar

Title:মাদ্রাসা থেকে জিহাদের ডাক দেওয়ার নামে ভাইরাল ভিডিওর আসল তথ্য জানুন

Written By: Nasim A  

Result: False

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *