
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে সেটিকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিন-ইজারায়েল বিবাদের দৃশ্য বলে দাবি করা হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে দুজন পুলিশের সাথে একজন মহিলা এবং দুজন লোক ধস্তাধস্তি করছে। একজন পুলিশ মহিলাটিকে গ্রেফতার করার চেষ্টা করছে এবং ওই দুজন লোক পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছে এবং তাকে আটকানোর চেষ্টা করছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, যারা রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে মানবতার গল্প শোনান, তাদের উদ্দেশ্যে আমার ফিলিস্তিনি বোনকে ই*সরাইলি সৈন্যরা নগ্নভাবে নির্যাতনের মাধ্যমে ধরে নিয়ে যায়, তখন মানবতা খুঁজে পাওয়া যায় না? নিশ্চয়ই যুদ্ধটা কোনো সমাধান হতে পারে না!
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার একটি ভিডিওকে ইজরায়েল-ফিলিস্তিন বিবাদের ঘটনা দাবি করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, চলমান রাশিয়া এবং ইউক্রেনের যুদ্ধের মাঝে হঠাৎ করে গত বছরের ইজরায়েল ফিলিস্তিনের প্রসঙ্গ টেনে এনে ঘটনার ওপর আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলির ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। ২০২১ সালের মে মাসে ফিলিস্তিন ও ইজরায়েলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। ফিলিস্তিনি জঙ্গি সংগঠন হামাস এবং ইজরায়েলি সরকার একে ওপরের ওপর আক্রমণ করে। দুই পক্ষ থেকেই আহত ও নিহতের খবর শোনা যায়।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে আমরা ভিডিওটিকে ‘ইনভিড-উই-ভেরফাই’ টুলে কয়েকটি কিফ্রেমে ভেঙ্গে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে ‘রেডিট’-এর ওয়েবসাইট এই ভিডিওটি দেখতে পাই। ২০১৮ সালে আপলোড করা এই ভিডিওর কমেন্ট সেকশন থেকে জানতে পারি এটি জর্জিয়ার লিলবার্ন শহরের ঘটনা।

এরপর প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে সংবাদমাধ্যম ‘ডেইলি মেল’-এর ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিলের একটি প্রতিবেদনে ভিডিওটিকে দেখতে পাই। জানতে পারি, এটি জর্জিয়ার লিলবার্ন শহরের ঘটনা। স্থানীয় পুলিশের কাছে একটি মেয়ের নিখোঁজ ডাইরি করা হয় এবং স্থানীয় একটি গির্জার পাদ্রীর ছেলেকে অভিযুক্ত করা হয়। পুলিশে যখন গির্জায় অভিযুক্ত উইলিয়াম জুনিয়রকে ধরতে যায় তখন পাদ্রী উইলিয়াম ক্রুজ এবং তার স্ত্রী ক্রিস্টিনার সাথে পুলিশের বচসা বেঁধে যায়। ওই পরিবারের সাথে ধস্তাধস্তি শুরু হয় পুলিশের। অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে চাইলে তার মা বাধা দেয় এবং পুলিশের ওপর চড়াও হয়। শেষ অবধি পরিবারের তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ওই প্রতিবেদনে তাদের গ্রেফতারের পরের ছবি এবং ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিও পাওয়া যায়।

এছাড়া, ইউটিউবে এই ঘটনার আরও বেশ কয়েকটি ভিডিও দেখতে পাই। সংবাদমাধ্যম ‘নিউ ইয়র্ক পোস্ট’-এর অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৮ সালের ৩০ মার্চ জর্জিয়ার এই ঘটনাটির অন্য একটি ভিডিও দেখতে পাই। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে এই ভিডিওতেও তারাই রয়েছে এবং সকলের পোশাক একই।
নিচে দুটি ভিডিওর স্ক্রিনশট পাশাপাশি দেওয়া হল যার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায় দুটি একই ঘটনার ভিডিও।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার একটি ভিডিওকে ইজরায়েল-ফিলিস্তিন বিবাদের ঘটনা দাবি করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সাথে যুক্ত করে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রসঙ্গ টেনে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল
Fact Check By: Rahul AResult: False