কোটা সংস্কার আন্দোলনে গোটা দেশ উত্তাল। যার জেরে ১০০ জনের বেশি প্রান হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন অগণিত সংখ্যক। এই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে বেশ ভাইরাল হচ্ছে। ২৪ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপে শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যাচ্ছে,”কোটাই থাকবে না, কোন কোটারই দরকার নেই। কোটা টোটার দরকার নেই, বিসিএস যেভাবে পরীক্ষা হবে মেধার মাধ্যমে সব নিয়োগ হবে।“ যা শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, সম্প্রতির কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে সব কোটাই বাতিল করলেন প্রধানমন্ত্রী।

ভাইরাল এই ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”সব কোটা বাতিল করলেন।“

তথ্য যাচাই করে আমরা পেয়েছি ভিডিওটি সম্প্রতির কোটা সংস্কার বিরোধী আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত নয় বরং ভিডিওটি ২০১৮ সালের। সেই সময়ের কোটা বিরোধী আন্দোলনের কড়া নিন্দা এবং বিরক্ত হয়ে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কোটা বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। পুরনো ভিডিওকে সম্প্রতির দাবির করে শেয়ার কড়া হচ্ছে।

ফেসবুক পোস্ট

তথ্য যাচাইঃ

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি সম্প্রতি এই মন্তব্য করে থাকতো তাহলে তা দেশ সহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম গুলোর শিরোনামে জায়গা পেত। কিন্তু, কোন গণমাধ্যমেই প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক সব কোটা বাতিলের নির্দেশ দেওয়া নিয়ে কোন প্রতিবেদনই পাওয়া যায় না। যা থেকে ধারনা হয়ে যাই যে, দাবিটি বিভ্রান্তিকর।

তারপর, ভিডিওর আসল উৎস খুঁজতে ভিডিওটির কি ফ্রেমগুলোকে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, ‘যমুনা টিভি’র ইউটিউব চ্যানেলে শেখ হাসিনার বক্তব্যের একটি ভিডিও পাই যার শিরোনামে লেখা হয়েছে,”কোটা পদ্ধতিরই দরকার নেই | Prime Minister's Speech On Quota।“ ভিডিওটি ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিলে আপলোড করা হয়েছে। তার বক্তব্যের দীর্ঘ এই ভিডিওটিতে তাকে কোটা বিরোধী আন্দোলন নিয়ে ছাত্রদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করতে শোনা যাচ্ছে। সেই সময় তিনি বলেন-কোটা থাকলেই সংস্কারের প্রশ্ন আসবে। এখন সংস্কার করলে আগামীতে আরেক দল আবারও সংস্কারের কথা বলবে। কোটা থাকলেই ঝামেলা। সুতরাং কোনও কোটারই দরকার নেই। দীর্ঘ এই ভিডিওর ৯ মিনিট ৩ সেকেন্ড থেকে ৯ মিনিট ১৫ সেকেন্ড অংশটুকু ভাইরাল ফেসবুক পোস্টের অংশ।

আরও দেখুনঃ

তথ্যের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় যে, ২০১৮ সালে কোটা বিরোধী আন্দোলনের জেরে সেই সময় প্রধানমন্ত্রী সব কোটা বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে সব কোটা বাতিলের ঘোষণার পর আন্দোলন থেমে গেলেও ২০২১ সালের কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে রিট করেন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান অহিদুল ইসলাম সহ সাতজন। তখন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ছিল ৩০ শতাংশ। এছাড়া ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ জেলা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা ছিল। চলতি বছরের ৫ জুনে সরকারের কোটা বাতিলের ঘোষণাকে অবৈধ বলে জানাই হাই কোর্ট। তারপর থেকেই মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ সমর্থনকারী ছাত্ররা আবার আন্দোলনের পথ বেঁছে নেই যার জেরেই দেশ জুড়ে আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। শেষে, চলতি মাসের ২১ তারিখে হাই কোর্টের রায় বাতিল করে সুপ্রিম কোর্ট কোটার সংস্কার করে এবং জানান, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৯৩% নিয়োগ হবে মেধার ভিত্তিতে, ৫% মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১% ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কোটা এবং বাকি ১% প্রতিবন্ধি-তৃতীয় লিঙ্গ কোটা থেকে।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক সব কোটা বাতিলের ঘোষণার ভিডিওটি সম্প্রতির কোটা বিরোধী আন্দোলনের সাথে সম্পর্কিত নয়। ভিডিওটি ২০১৮ সালের। সেই সময়ের কোটা বিরোধী আন্দোলনের কড়া নিন্দা এবং বিরক্ত হয়ে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে কোটা বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। পুরনো ভিডিওকে সম্প্রতির দাবির করে শেয়ার করা হচ্ছে।

Avatar

Title:শেখ হাসিনা কর্তৃক সব কোটা বাতিলের ঘোষণার ভিডিওটি সম্প্রতির নয় বরং ২০১৮ সালের

Fact Check By: Nasim Akhtar

Result: Missing Context