বাংলাদেশের বৌদ্ধ মন্দিরে অগ্নিসংযোগের খবরটি নয় মাস পুরনো 

Communal Missing Context

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম ফেসবুকে গৌতম বুদ্ধের দুটি মূর্তির সম্বলিত একটি ছবি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বৌদ্ধ মন্দিরে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। ফেসবুক পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”২৯শে সেপ্টেম্বরের কালো রাত্রির কথা ভুলতে না ভুলতে আবার মনে করিয়ে দিল রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি বৌদ্ধ মন্দির হামলা।“

তথ্য যাচাই করে আমরা পেয়েছি ছবিটি সম্প্রতির নয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কিছু দুর্বৃত্তরা  চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দিরে আগুন ধরিয়েছিল। 

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ 

ফেসবুক পোস্ট, ফেসবুক পোস্ট  

তথ্য যাচাইঃ 

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে গুগলে প্রাসঙ্গিক কি ওয়ার্ড সার্চ করি। প্রথমে আলোর প্রতিবেদন থেকে জানা যায় – চলতি মাসের ১৮ তারিখে খাগড়াছড়ি সদরে মোটরসাইকেল চুরিকে কেন্দ্রে করে গণপিটুনিতে মো. মামুন (৩০) নামের এক বাঙালি যুবকের মৃত্যুর পর সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ওই দিন সেখানকার পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে হত্যার প্রতিবাদে দীঘিনালায় বাঙালিরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। বাঙালিদের অভিযোগ, মিছিলটি বোয়ালখালী বাজার অতিক্রম করার সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, সংঘর্ষের একপর্যায়ে দীঘিনালার লারমা স্কয়ারে বিভিন্ন দোকান ও বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। দীঘিনালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রশীদ বলেন, আগুনে দীঘিনালা বাসস্টেশন ও লারমা স্কয়ার এলাকায় ১০২টি দোকান আগুনে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাহাড়িদের ৭৮টি ও বাঙালির সম্প্রদায়ের ২৪টি দোকান রয়েছে। 

প্রতিবেদন আর্কাইভ 

এই সংঘর্ষে কোন ধর্মীয় স্থানে হামলার খবর খুঁজে পাইনা। 

তারপর, ভাইরাল ফেসবুক পোস্টের ছবির আসল উৎস খুঁজতে ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, International Buddhist Tv- নামের ফেসবুক পেজ থেকে ছবিটি ১০ জানুয়ারি,২০২৪, তারিখে পোস্ট করা হয়েছে এরকম একটি পোস্ট পাওয়া যায়। যার ক্যাপশনের মাধ্যমে জানানো হয় যে, ৬ই জানুয়ারি ২০২৪, রাতের অন্ধকারে রাঙ্গুনিয়া শরনংকর ভিক্ষুর মন্দির জ্ঞানশরণ মহারণ্য বৌদ্ধ বিহারে অগ্নিসংযোগ হয়েছিল। ছবিগুলো সেই সময়ের। যা থেকে স্পষ্ট হয় যে, ছবিটি সম্প্রতির নয় এবং চট্টগ্রামে চলমান দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের সাথে সম্পর্কিত নয়। 

ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ 

হিন্দু পোস্ট’-এর ১০ জানুয়ারি এবং ‘হিন্দু ভয়েস’-এর ১২ জানুয়ারি তারিখের প্রতিবেদনে এই একই ছবির উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭ জানুয়ারির রাতে রাঙ্গুনিয়ায় অবস্থিত বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দির ও মঠে অগ্নিসংযোগ করেছিল অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। আগুনের কারণে মঠের কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও, মঠের ভিতরের মন্দিরটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভগবান বুদ্ধের মূর্তি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। 

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ছবি সম্প্রতির নয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কিছু দুর্বৃত্তরা চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার বিখ্যাত বৌদ্ধ মন্দিরে আগুন ধরিয়েছিল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *