
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেরে ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার পর থেকে সময় সময়েই তার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন দাবি নিয়ে শেয়ার করা হচ্ছে (সেগুলোর আমরা সত্যতা যাচাই করেছি)। সম্প্রতি তার একটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে, যেখানে তাকে এক সুটধারী মহিলার সঙ্গে সাক্ষাতের মতো অবস্থায় বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এই ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, ভারতে অবস্থানরত অবস্থায় বঙ্গবন্ধু কন্যা আমেরিকার গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
ছবিটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে,”মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান “তুলসী গ্যাবার্ড” আমাদের মমতাময়ী অভিভাবক বাংলাদেশের বৈধ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী” (বঙ্গবন্ধুকন্যা” দেশরত্ন শেখ হাসিনা’র সাথে একান্ত বৈঠক শেষে) “আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে “গ্যাবার্ড” ভালোবেসে বুকে জরিয়ে ধরে জানিয়েছেন” “আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি আপনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েই দেশে ফিরছেন”💙🤍 “তুলশী গ্যাবার্ডের” আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি এই আবেগঘন ভালোবাসা ও এক নজিরবীহিন প্রতিশ্রুতির কথা আমরা বাংলাদেশের মুক্তিকামী সাধারন জনগন সারাজীবন মনে রাখবো” “এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট “ডোনাল্ড ট্রাম্প” প্রশাসন ও আমাদের পাশ্ববর্তী পরম বন্ধু দেশ ভারত সরকারের মাননীর প্রধানমন্ত্রী” “নরেন্দ্র মোদিজির” সরকারের প্রতি আমরা চির কৃতজ্ঞ থাকবো” 💗জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু💗।“
তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি যে, দাবিটি ভুয়া এবং ছবিটি সম্পাদিত। দুটি ভিন্ন ভিন্ন ছবিকে একত্রিত করে ফেসবুক পোস্টের সংশ্লিষ্ট ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
| ফেসবুক পোস্ট | আর্কাইভ | 
তথ্য যাচাইঃ
ভারতে আশ্রয়ের পর থেকে শেখ হাসিনাকে প্রকাশ্যে দেখা গেলে তা নিয়ে নিশ্চয়ই গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পেত। গুগলে কীওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এরকম কোনো প্রতিবেদন পাওয়া যায় না যেখানে শেখ হাসিনা এবং তুলসি গ্যাবার্ডের সাক্ষাৎকারের খবর উল্লেখ করা হয়েছে, যা থেকে ধারণা হয় যে খবরটি বিভ্রান্তিকর।
তারপর, সংশ্লিষ্ট ছবির আসল উৎস খুঁজতে ছবিটিকে দুই ভাগে ভাগ করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলে, তুলসি গ্যাবার্ডের একই ভঙ্গিতে এবং একই পরিধানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাথে বসে থাকতে দেখা যায়। মোদী এবং তুলসি গ্যাবার্ডের ইএ ছবিটি নরেন্দ্র মোদীর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে ১৭ মার্চ, ২০২৫, তারিখে পোস্ট করে লাখা হয়েছে,”তুলসী গাবার্ডকে ভারতে স্বাগত জানাতে পেরে আনন্দিত। ভারত-মার্কিন যৌথ বৈশ্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও অগ্রগতির বিষয়ে মতামত বিনিময় করলাম। উভয় দেশই সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা এবং সমুদ্র ও সাইবার নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।“
চলতি মাসের ১৫ তারিখে তুলিস গাবার্ড এবং নরেন্দ্র মোদীর দিল্লীতে এই সাক্ষাৎকার নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রতিবেদন পেয়ে যায়।
তারপর, সংশ্লিষ্ট ফেসবুক পোস্টের শেখ হাসিনার অংশটি গুগল লেন্সে সার্চ করলে ভারত সরকারের ওয়েবসাইটে শেখ হাসিনাকে একই চেয়ারে, একই পোশাকে এবং একই ভঙ্গিতে নরেন্দ্র মোদীর সাথে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দুই পক্ষীয় বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
উপরোক্ত তথ্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, শেখ হাসিনার অংশটি কেটে নিয়ে সেটি তুলসি গ্যাবার্ডের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের ছবির উপর মোদীর জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে ফ্যাক্ট ক্রিসেণ্ডো এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, ভারতে অবস্থানরত অবস্থায় শেখ হাসিনার কন্যা আমেরিকার গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান তুলসি গ্যাবার্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের দাবিটি ভুয়া এবং ছবিটি সম্পাদিত। দুটি ভিন্ন ভিন্ন ছবিকে কেটে একত্রিত করে ফেসবুক পোস্টের সংশ্লিষ্ট ছবিটি তৈরি করা হয়েছে।
 
					  Title:শেখ হাসিনা এবং তুলসি গ্যাবার্ডের সাক্ষাৎকারের ভাইরাল ছবিটি সম্পাদিত
Fact Check By: Nasim AkhtarResult: Altered


 
	 
						 
						