
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো পোস্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কলকাতায় কালীপুজোর উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশী ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। একটি পোস্টে ‘বয়কট সাকিব’ স্ট্যাম্প লাগানো একটি সাকিবের ছবি শেয়ার করে এই ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে,
“কোটি ভক্তের প্রাণ সাকিব আল হাসান কলকাতায় কালীপুজো উদ্বোধন করছেন। একজন মুসলিম ক্রিকেটারের কাছ থেকে এটি কখনোও আশা করেনি জাতি একজন হাজী কি ভাবে হিন্দুদের পূজা উদ্বোধন করে #আমি_একজন_মুসলিম_হিসাবে_তোমাকে_বয়কট_করলাম ❌”।
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর। কলকাতায় কালীপুজোর উদ্বোধন করেননি সাকিব আল হাসান।
তথ্য যাচাই
প্রথমেই কিওয়ার্ড সার্চ করে সংবাদমাধ্যম ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর একটি প্রতিবেদনে এই ঘটনার ওপর লেখা একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। ১৬ নভেম্বরের এই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, সম্প্রতি কলকাতার একটি কালীপুজোর মণ্ডপে এসেছিলেন এই বাংলাদেশী ক্রিকেটার। তারপর তার মণ্ডপে আসার ছবি সোশ্যাল মিডিয়া ভাইরাল করে দাবি করা হয় তিনি কালীপুজোর উদ্বোধন করেছেন। এরপরই এই ঘটনাটি নিয়ে রীতিমতো হই-হুল্লোড় পরে যায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। সাধারণ কুমন্তব্য থেকে প্রানের হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয় সাকিবকে।
এই পরিস্থিতিতে ফেসবুক লাইভে এসে সাফাই দেন সাকিব। তিনি বলেন, আমি কলকাতায় কোনও পুজোর উদ্বোধন করিনি। একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে আমি সেটা করবও না।
এরপর আমরা সাকিবের লাইভ ভিডিওটি তার ইউটিউব চ্যানেলে খুঁজে পাই। ভিডিওতে তিনি বলেন,
“এখানকার মিডিয়ায় বলা হয়েছে, আমি নাকি পুজো উদ্বোধন করতে গিয়েছি। কিন্তু সেটা করিনি। তার প্রমাণও আছে। ওখানকার আমন্ত্রণপত্র দেখুন। সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। উদ্বোধন হয়েছে আমি যাওয়ার আগে। যেখানে অনুষ্ঠানটা হয়, সেটা অবশ্যই পূজামণ্ডপ ছিল না। পাশে আর একটা স্টেজ করা ছিল। সেখানে ছিলাম আমি। আর সেখানে ধর্ম-বর্ণ নিয়ে কোনও কথা হয়নি। বেরিয়ে যাওয়ার সময় অনেক রাস্তা বন্ধ ছিল। পূজামণ্ডপ পাশেই ছিল একেবারে। খুব স্বাভাবিকভাবে সেই মণ্ডপ টপকে আমাকে যেতে হত। সেটাই করেছি আমি। মণ্ডপের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় পরেশদা (পাল) আমাকে অনুরোধ করেন প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের জন্য। আমি তা করি। ওখানে একটা ছবিও তোলা হয়।“
তিনি আরও বলেন, “আমি মাত্র দু’মিনিট পূজামণ্ডপে ছিলাম। সেটা নিয়েই লোকে বলছেন। আবারও বলছি, পুজোর উদ্বোধন আমি কখনওই করিনি। একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে আমি সেটা করবও না। তারপরেও হয়তো আমার ওখানে যাওয়াটাই ঠিক হয়নি। আপনাদের সেটা মনে হলে, আমি ক্ষমাপ্রার্থী। ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেদিকে খেয়াল রাখব আমি। আশা করি, আপনারা পুরো বিষয়টাকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার কোনও অভিপ্রায় ছিল না নিজের ধর্মকে ছোট করে অন্য ধর্মকে বড় করার।”
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। কলকাতায় কালীপুজো উদ্বোধনের দাবিকে নাকচ করেন সাকিব আল হাসান।