
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভারতের কর্ণাটকের হিজাব বিতর্কের মুখ মুসকান নামে মুসলিম মেয়েকে ডিএসপি-এর পদ দিল ভারতীয় পুলিশ। আরও দাবি করা হয়েছে, হিজাব পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে ভারতীয় কোর্ট। পোস্টের ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সাদা পোশাক এবং সাদা হজাব পরিহিত একটি তরুণীকে সারিতে দাড়িয়ে থাকে উর্দি পরা পুলিশ অফিসারদের সাথে পরিচয় করানো হচ্ছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে – দেখুন ফেসবুকের ক্ষমতা, অবশেষে মুসকান নামের সেই ছাত্রীকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতে বাধ্য হলো ভারতীয় পুলিশ এবং কোর্টের রায় এসছে এখন থেকে হিজাব পড়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারবেন ছাত্রীরা!!
ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো তথ্য যাচাই করে দেখতে পেয়েছে এই দাবিটি ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর। ভারতে নারী দিবস উপলক্ষ্যে একজন ১৪ বছর বয়সী ছাত্রীকে একদিনের জন্য ডিএসপি বানানোর ঘটনাকে হিজাব বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
তথ্য যাচাই
ভারতে ডিএসপি বা ওই জাতীয় পুলিশের পদের যোগ্যতা হিসেবে নুন্যতম ২১ বছর বয়স নির্ধারিত রয়েছে। ভাইরাল ভিডিওটি ভালোভাবে লক্ষ্য করে দেখতে পাই ভিডিওর মধ্যে লেখা রয়েছে, আন্তর্জাতিক নারি দিবস উপলক্ষ্যে একজন মেয়েকে একদিনের জন্য মহারাষ্ট্রে বুলধানা রাজ্যের সুপারইন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশের (এসপি) পদ দেওয়া হয়েছে।
এর থেকে সূত্র নিয়ে আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র ২০২০ সালের ৫ মার্চের একটি প্রতিবেদনে (আর্কাইভ) এর অনুসন্ধান পাই। এই প্রতিবেদনে ভাইরাল ভিডিওটি পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদনটি অনুযায়ী, “৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে এক অভিনব উদ্যোগে মহারাষ্ট্রের বুলধানা জেলার আধিকারিকরা মালকাপুর তহসিলের জিলা পরিষদ উর্দু হাই স্কুলের ১৪ বছর বয়সী ছাত্রী শাহরিস কানওয়ালকে একদিনের জন্য ডিসট্রিক্ট সুপার ইন্টেনডেন্ট অফ পুলিশ (ডিএসপি)-এর পদ দেন।”

স্বাভাবিক ভাবেই প্রতিবেদনের এই ভিডিওটি টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলও পেয়ে যাই।
শাহরিস কানওয়াল নাম দিয়ে গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার আরেকটি প্রতিবেদন (আর্কাইভ) থেকে জানতে পারি, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে সরকারি স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে একদিনের জন্য কালেক্টার ও ডিএসপি হওয়ার সুযোগ দেন বুলধানা জেলার আধিকারিকরা। তাদের মধ্যেই একজন ছিল শাহরিস কানওয়াল।

এরপর ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো বুল্ধানা শহরের এস পি দিলিপ পাটিলের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি জানিয়েছেন, “মার্চ মাসে ‘আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস’কে কেন্দ্র করে জেলা অফিসার অফিস, জেলা কাউন্সিলের প্রধান কার্যকারি অফিস এবং পুলিশ অফিসার তিন অফিসে ছাত্রদের যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের এক দিন কালেক্টর, সি.ই.ও এস. পি পদে বসানো হয়। ভাইরাল ছবিটি ৪ মার্চ তারিখের। ছবিতে দেখা পাওয়া মেয়েটির নাম শেরিস কানওয়াল। মালকাপুর শহরের শাহরিস কানওয়াল নবম শ্রেণীর ছাত্রী। ছাত্রদের উৎসাহিত করায় আমদের উদ্দেশ্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল দাবি বিভ্রান্তিকর।”
তিনি আরও বলেন, “একজন অফিসার যেভাবে অন্য জায়গায় বদলি হয়ে যায় এবং নতুন জায়গায় তার প্রথম দিন যেভাবে কেটে যায়, একইভাবে শেরিসও পুরো অফিস ঘুরে দেখেন, সব পুলিশ অফিসারের সাথে দেখা করে, তারা কী করেন সে সম্পর্কে তথ্য পাই। অর্থাৎ শেরিস তাদের সঙ্গে দেখা করেন যারা নিয়ে এসেছেন। তাদের কষ্ট এবং তাদের সমস্যার কথা শোনেন। একদিন বয়সী এসপি ছাত্রের জন্য একটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা দেওয়াই আমাদের প্রচেষ্টা ছিল।“
বুলধানার শিক্ষক ডক্টর শ্রীরাম পানজাদে-এর সহায়তায় আমরা শেরিস কানওয়াল-এর সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান “আমার পুরো নাম শেরিস কাওয়াল আব্দুল আসিদ এবং আমি মালকাপুর জেলা পরিষদ পাঠশালার দশম শ্রেণীর ছাত্রী। নবম শ্রেণীতে ভালো নম্বর পাওয়ার পর, ২ মার্চ মার্চ আমাদেরকে প্রথমে মলকাপুরের শিক্ষা অফিসার ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকেন। সেখানে তিনি আমাকে মলকাপুর এলাকা সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তারপরে আমাকে পরবর্তী প্রক্রিয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল। এরপর ৪ মার্চ আমার স্কুলের শিক্ষক এবং আমি বুলধানায় যাই, সেখানে প্রথমে বুলধানার শিক্ষক এবং তারপর এসপি স্যার আমার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। আমাদের বুলধানার কালেক্টর ম্যাডামের সাথেও দেখা করানো হয়েছিল, তারপরে আমাকে একদিনের জন্য বুলধানার এসপি ঘোষণা করা হয়েছিল এবং আমাকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল।”
শেরিস আমাদের জানায় কীভাবে তাকে স্বাগত জানানো হয়েছিল এবং এসপি হিসাবে সে কী কী করেছিল। শেরিস বলে, “আমি এসপির অফিসে পৌঁছানোর সাথে সাথে আমাকে অভ্যর্থনা জানানো হয়, সম্মান দেওয়া হয় এবং তারপরে সমস্ত পুলিশ সুপারের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। তারপর দেখলাম ২-৩ জনের মামলা হয়েছে এবং সব পুলিশ সুপার আমার সঙ্গে ছবি তুলেছেন।“
হিজাব বিতর্ক নিয়ে কর্ণাটক হাই কোর্ট জানিয়েছে, যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইউনিফর্ম নির্ধারিত করা আছে সেখানে হিজাব বা উত্তরীয়, কোনরকম ধর্মীয় পোশাক পরে যাওয়া যাবে না। পড়ুন বিস্তারিত।
নিষ্কর্স: তথ্য যাচাই করার পর ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুয়া। ভারতে নারী দিবস উপলক্ষ্যে একজন ১৪ বছর বয়সী ছাত্রীকে একদিনের জন্য ডিএসপি বানানোর ঘটনাকে হিজাব বিতর্কের সাথে জুড়ে ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:ভারতীয় হিজাব-বিতর্কে ভাইরাল মুসকানকে ডিএসপি-এর পদ দেয়নি ভারতীয় পুলিশ
Fact Check By: Rahul AResult: False