না, এটি ১৯৪০ সালে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের আগমনের ছবি নয়
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি পোষ্ট শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি ১৯৪০ সালে ফিলিস্তিনে ইহুদীদের আগমনের ছবি। পোষ্ট করা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে রুক্ষ ও অর্ধনগ্ন কিছু সংখ্যক লোক অসহায় অবস্থায় দাড়িয়ে রয়েছে। পোস্টটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “ছবিটা দেখার পর কি ভাবছেন? এরা কারা? পৃথিবীর কোথাও যখন তারা নিরাপদ নয়, এরা ঠিক এভাবেই এসেছিল ১৯৪০ সালে ফিলিস্তিনে একটু আশ্রয় পাওয়ার আসায় আর ফিলিস্তিনিরাও আমাদের মতই দয়া দেখিয়ে নিজেদের জায়গা, খাবার, পরার কাপড় দিয়ে সাহায্য করলো, পরিশেষে ফকির হয়ে এসে মালিকের বাড়ি দখল। বলছিলাম আন্তর্জাতিক গাদ্দার ঈসরাঈলিদের কথা। আল্লাহ তায়ালা ফিলিস্তিন ও বায়তুল মুকাদ্দাসকে হেফাজত করুন।“
তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভুয়ো ও ভিত্তিহীন। ১৯৪৫ সালের ইহুদী বন্দীদের উদ্ধারের ছবিকে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ১০ মে থেকে ইজরায়েলি সেনার ধারাবাহিক হামলায় গাজায় ৬৫ জন শিশু-সহ ২৩২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ২ হাজার জন। বিমানহানায় কয়েক হাজার বাড়ি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। ফলে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। পাল্টা ইজরায়েল সেনা দাবি করেছে, হামাস ও অন্যান্য ইসলামপন্থী সশস্ত্র গোষ্ঠী প্রায় সাড়ে ৪ হাজার রকেট ছুড়েছে। তবে এর বেশিরভাগকেই ‘ডোম এয়ার ডিফেন্স’ দিয়ে আটকানো গিয়েছে। প্যালেস্তেনীয় গোষ্ঠীগুলির রকেট হামলায় ইজরায়েলে ২ শিশু, ১ সেনা-সহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন ভারতীয় নাগরিকও রয়েছেন। অবশেষে, ২১ মে ইসরায়েল প্রশাসন এবং হামাস দুই পক্ষই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ছবিটিকে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে ছবিটিকে আমরা ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যমে ‘টেলিগ্রাফ’-এর ৬ই জানুয়ারী ২০১৭ সালের একটি প্রতিবেদনে দেখতে পাই। ওই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, ছবিটি “১৯৪৫ সালের মে মাসে অস্ট্রিয়ায় অবস্থিত এবেনিস বন্দি-শিবিরে বন্দী থাকা ইহুদীদের উদ্ধার করার পরের ছবি। তাদের উদ্ধার করেছিল ইউনাইটেড স্টেট আর্মি।
এছাড়া, কিওয়ার্ড সার্চ করে ভাইরাল ছবিটিকে সংবাদ সংস্থা ‘গেট্টি ইমেজস’-এর ওয়েবসাইটে দেখতে পাই। সেখানেও একই কথা বলা হয়েছে। জানা যায়, ছবিটি ৭ মে ১৯৪৫ সালের। আরও বলা হয়, এই বন্দী শিবিরটি সাধারণত বিজ্ঞানমূলক বিভিন্ন পরীক্ষার জন্য ব্যবহার করা হত।
হলকাস্ট এন্সিক্লপিডিয়া থেকে জানতে পারি, ৭মে ১৯৪৫ সালে তোলা এই ছবির চিত্রগ্রাহক হলেন ‘আর্নল্ড ই স্যামুয়েলসন’।
নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ১৯৪৫ সালের ইহুদী বন্দীদের উদ্ধারের ছবিকে ভিত্তিহীন ও বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে।