সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের রংপুরে হিন্দুদের ঘর, বাড়ি ও মন্দির পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। পোস্ট করা ৫৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক মন্দিরে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। মন্দিরের ভেতরে একটি মূর্তিকে আগুনে ভস্মীভূত হতে দেখা যাচ্ছে। দমকল বাহিনির একটি দল সেখানে রয়েছে এবং আগুনের লেলীহান শিখাকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন।

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “বাংলাদেশের রংপুরে ভয়াবহ অবস্থা। হিন্দুদের বাড়িঘর ও মন্দির জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের বটের বাজার মাঝিপাড়া সহ দুটি গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট। ঘটনার দিন: রবিবার, ১৭ অক্টোবর ২০২১, রাত ১০টা “

ভারতের ত্রিপুরার ধলাই জেলার একটি দুর্গামণ্ডপে সপ্তমীর রাতের অগ্নিকান্ডের ভিডিওকে ভুয়া দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে

ফেসবুক পোস্ট

প্রসঙ্গত, উল্লেখ্য, কুমিল্লায় হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজার মন্ডপে কোরআন পাওয়া ঘিরে দেশজুড়ে একধরণের অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। পুজোমন্ডপ, মন্দির ও প্রতিমা ভাঙচুর এবং আগুনের পর দেশের ২২ জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। কুমিল্লার ঘটনায় এপর্যন্ত ৪৩ জনকে আটক করা হয়েছে।

এর মধ্যেই গত রবিবার অর্থাৎ ১৭ অক্টোবর রংপুর জেলার এক হিন্দু যুবকের ধর্ম বিদ্বেষী ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে নতুন করে এক বচসা বেঁধে ওঠে। এই বচসার জেরে আগুনে জ্বলে ওঠে ২০টি হিন্দু বাড়ি।

তথ্য যাচাই

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ভিডিওটিকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে সূত্র খোঁজার চেষ্টা করি। ভিডিওটর প্রায় ১৩ সেকেন্ডের মুহূর্তে দেখতে পাওয়া দমকল কর্মীরা খাকী উইনিফর্ম পরে রয়েছে যেখানে বাংলাদেশ দমকল বাহিনীর ইউনিফর্মের রং ভিন্ন। নিচে বাংলাদেশ দমকল বাহিনী এবং ভিডিওর দমকল কর্মীদের ইউনিফর্মের একটি তুলনা দেওয়া হল। এখান থেকে ধারণা পাওয়া যায় এটি বাংলাদেশের ঘটনা নয়।

fire poliuce.png

এরপর ভাইরাল ভিডিওর আসল উৎস খুঁজে বের করার উদ্দেশ্যে ভিডিওটিকে ইনভিড-উই-ভেরিফাই টুলের মাধ্যমে কয়েকটি কি-ফ্রেমে ভাগ করে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে সংবাদ মাধ্যম ‘TIME8’-এর চলতি বছরের ১৮ অক্টোবর তারিখের একটি প্রতিবেদনে ভিডিওর দৃশ্য দেখতে পাই।

এই প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, ত্রিপুরার ধলাই জেলার কমল্পুর পঞ্চায়েত এলাকার মারাছেরা বাজারে দুর্গা পুজার মন্ডপ সহ ৪টি দোকানে আগুন লেগে যায়। আগুনের সুত্রপাত কোথা থেকে হয়েছে তা জানা যায়নি। আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গেই পার্শ্ববর্তী অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্রে খবর দেওয়া হয়। দমকল বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে।

TIME8 প্রতিবেদন আর্কাইভ

এই সুত্র ধরে ফেসবুকে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করি। দেখতে পাই ত্রিপুরার স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ‘সোশ্যাল ত্রিপুরা নেটওয়ার্ক’-এর ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি ১৩ অক্টোবর পোস্ট করা হয়। ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা রয়েছে “সপ্তমীর রাতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে ছাই মরাছড়া বাজারে দুর্গোমন্ডপসহ একাংশ দোকানপাট।।।।“ ।

ত্রিপুরার আরেকটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম ‘টুডে ত্রিপুরা২৪*৭’-এর ফেসবুক পেজ থেকেও এই ভিডিও একই দাবির সাথে ১৩ অক্টোবর শেয়ার করা হয়। অতএব, স্পষ্টতই প্রমাণ হয় ভারতের ত্রিপুরার ভিডিওকে বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতির সাথে যুক্ত করে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ভারতের ত্রিপুরার ধলাই জেলার একটি দুর্গামণ্ডপে সপ্তমীর রাতের অগ্নিকান্ডের ভিডিওকে।

Avatar

Title:ভারতের ত্রিপুরার দুর্গামণ্ডপে অগ্নিকান্ডের ভিডিওকে রংপুরের ঘটনা দাবি করে ভুয়া পোস্ট ভাইরাল

Fact Check By: Rahul A

Result: Partly False