
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে একটি ভিডিও শেয়ার করে করে দাবি করা হচ্ছে, হাজার হাজার শরণার্থী অবৈধভাবে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করছে। ২৬ সেকেন্ডের এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকজন পুরুষ, মহিলা, কমবয়সী ছেলে ও মেয়ে কাঁটাতারের বেড়া উপেক্ষা করে এক পাড় থেকে অন্য পাড়ে আসছে। পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে “বাঙালীর পেটে লাথি মেরে হাজার হাজার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা বাংলায় ঢুকছে এতে বাঙালীর বিন্দুমাত্র চিন্তা নেই ….. কিন্তু দু-চার টাকা পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়লেই বাঙালীর অন্তরে বিদ্রোহী চিন্তা জাগে !! শ্যামা প্রসাদ মুখপাধ্যায় লড়াই করে এই বাংলাকে বাংলাদেশের হাত থেকে রক্ষা করে ছিলেন…. তাই আজ 20শে জুন বাঙালীরা #পশ্চিমবঙ্গ_দিবস পালন করতে পারছে ….. এখনো হিন্দু বাঙালীরা যদি না জাগে এই বাংলা বাংলাদেশের সাথে অন্তভুক্ত হবে।। <সংগৃহীত>”।
আমরা তথ্য যাচাই করে জানতে পারি পোস্টের মাধ্যমে করা এই দাবি ভুয়া ও বিভ্রান্তিকর। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাখাইন-বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাঁটাতার পেরোনোর ভিডিওকে পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত করে ভুয়া পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।
রোহিঙ্গা কারা?
রোহিঙ্গা আদিবাসী জনগোষ্ঠী পশ্চিম মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের একটি উলেখযোগ্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী। যাদের বেশির ভাগেরই ধর্ম ইসলাম। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বাস করলেও দেশটিতে তাদের কোনো নাগরিকত্ব নেই। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির সামরিক বাহিনীর হাতে নির্যাতিত এবং পরবর্তীতে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাংলাদেশসহ পার্শ্ববর্তী দেশে আশ্রয় নেওয়ার ঘটনায় বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম আলোচিত বিষয় রোহিঙ্গা সংকট।
তথ্য যাচাই
এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ভিডিওটিকে ‘ইনভিড-উই-ভেরিফাই’ টুলে কয়েকটি ফ্রেমে ভেঙ্গে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ফলাফলে, ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর এক টুইটে এই ভিডিওটি দেখতে পাই। দাবি করা হয় এটি বাংলাদেশ ও মুংদাও সীমান্তে ০মুক্তিপত্র ছাড়া কাঁটাতার পার হওয়ার দৃশ্য। সাথে এও বলা হয় এরা রোহিঙ্গা নয়, বাংলাদেশি।
Look@them!
— Kyaw Swar (@KyawSwa01654702) September 4, 2017
Borderpass between Bangladesh&Maungtaw in Myanmar without passports.
They are Bangladesh citizens.They are Bangalis,not Rohingya. pic.twitter.com/gOhDgUQKw9
আরও দেখতে পাই, কামাল ওজডাল নামে একটি ভেরিফাইড টুইটার হান্ডেল থেকে ভাইরাল ভিডিওটি ২০১৭ সালের ৭ সেপ্টেম্বর তুর্কি ভাষায় লেখা ক্যাপশন সহ পোস্ট করা হয়েছিল। গুগল ট্রান্সলেট এর মাধ্যমে জানতে পারি ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “মায়ানমার সেনাবাহিনী দ্বারা অত্যাচারিত রোহিঙ্গা মুসলমানরা গনহত্যার হাত থেকে বাঁচতে স্বদেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছে।” কামাল ওজডাল হলেন তুরস্কের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সাদাকা তাশি’ এর চেয়ারমান।
ইউটিউবে প্রাসঙ্গিক কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখতে পাই, তুর্কির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ‘আনাদুল এজেন্সি’র অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে ২০১৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর এই ভিডিওটি আপলোড করা হয়েছিল। ভিডিওটির ‘৫১ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট ১৫ সেকেন্ড’ অংশ হল আমাদের ভাইরাল ভিডিওর দৃশ্য।
‘বিবিসি নিউজ’র ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বরের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৫ অগস্ট মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের বাসিন্দারা সেনাবাহিনীর উপর আক্রমন করে। এই ঘটনায় ১২ জন সৈন্যর মৃত্যু হয়। তার পরেই সেনাবাহিনী পাল্টা আক্রমণ করে এবং রোহিঙ্গাদের অপর অত্যাচার শুরু করে। ফলে প্রাণ বাঁচাতে রাখাইনবাসী স্বদেশ ছেড়ে বাংলাদেশমুখী হয়।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাখাইন-বাংলাদেশ সীমান্তে রোহিঙ্গা মুসলিমদের কাঁটাতার পেরিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার ভিডিওকে পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত করে ভুয়া পোস্ট ভাইরাল করা হচ্ছে।

Title:বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ভিডিওকে বিভ্রান্তিকর দাবির সাথে ভাইরাল করা হচ্ছে
Fact Check By: Rahul AResult: False