সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবি শেয়ার করে সেটিকে সাম্প্রতিক ত্রিপুরার সাম্প্রদায়িক অহিংসার ঘটনার বলে দাবি করা হচ্ছে। পোস্টে মোট দুটি ছবির একটি কোলাজ রয়েছে কার একটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি বিক্ষোভ চলছে এবং রাস্তার ওপর একাধিক আগুনের স্তুপ জ্বলচে। দেখে বোঝা যাচ্ছে প্রচুর লোক এই বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন। অন্য ছবিতে, দেখা যাচ্ছে একটি ভবনে আগুন লেগেছে এবং দমকল কর্মীরা আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে। জ্বলন্ত এই ভবনের সামনে অনেকগুলি লোক দাড়িয়ে রয়েছে।

পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে, “ত্রিপুরা মুসলমানদের জন্য দোয়া করুন সবাই। ভারতের একটি ছোট্ট অঙ্গরাজ্য ত্রিপুরা। ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত ১৬ টি মসজিদে আগুন এবং অনেক ঘর বাড়িতে আগুন লাগিয়েছে। ত্রিপুরার মুসলিমদের জন্য দোয়া করুন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে মুসলমানদের উপর বেশ কিছুদিন ধরে হামলা চলছে। মুসলিমদের বহু বাড়িঘর, দোকানপাট ও ১২টি মসজিদ পুড়িয়ে দিয়েছে কিছু উগ্র হিন্দুত্ববাদী জনগোষ্ঠী ও বজরং দলের লোকেরা। .................................। নিশ্চয়ই আল্লাহ ছাড় দেন কিন্ত ছেড়ে দেন না।“

তথ্য যাচাই করে আমরা দেখতে পেয়েছি এই দাবি ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর। দুটি পুরনো ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবিকে ত্রিপুরা হিংসার সাথে যুক্ত করে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে।

17170230-e93d4901feeddf8b41becff61a4b9510.png
ফেসবুক পোস্ট আর্কাইভ

উল্লেখ্য, গত মাসের ১৫ তারিখ কুমিল্লার একটি দুর্গামণ্ডপে কোরআন রাখাকে কেন্দ্র করে সাম্প্রদায়িক অহিংসার শুরু হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের ওপর হামলা এবং তাদের ঘর বাড়ি জালিয়ে দেওয়ার খবর আসে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এরপর ২১ বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী ভারতীয় রাজ্য ত্রিপুরায় এই ঘটনার বিরোধিতায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে এবং মিছিল হিংসাত্মক রুপ ধারন করে যার জেরে বেশ কিছু বাড়ি, দোকান ও মসজিদে হামলা করা হয়। এরপর ২৬ তারিখ বিশ্ব হিন্দু পরিষদ-এর নেতৃত্বে উত্তর ত্রিপুরার পানিসাগর শহরে প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয় এবং সেখানেও বিক্ষোভকারীদের কিছুসংখ্যক লোক রোয়া বাজারে কয়েকটি বাড়ি ভাংচুর করে এবমহ কয়েকটি দোকান ও মসজিদে আক্রমণ করে। ৩০ অক্টোবর লক্ষিপুর এবং কইলাশহরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

তথ্য যাচাই

এই দাবির সত্যতা যাচাই করতে ক্রপ করে ছবি দুটিকে আলাদা আলাদাভাবে গুগল রিভার্স ইমেজ সার্চ করি।

প্রথম ছবিঃ সংবাদ মাধ্যম ‘কাশ্মীর লাইফ’র একটি প্রতিবেদনে এই ছবিকে দেখতে পাই। এই খবর অনুযায়ী, এটি ২০১২ সালের শ্রীনগরের দাস্তাগির সাহিব মাজারে আগুন লাগার ছবি।

image6.png
প্রতিবেদন আর্কাইভ

সংবাদ মাধ্যম ‘টাইমস অফ ইন্ডিয়া’-এর ২০১২ সালের ২৬ জানুয়ারির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০০ বছর পুরনো এই মাজারে আগুন লাগার ঘটনায় ২ ডজন লক আহত হয়। শর্ট সার্কিটের কারণে এদিন সকাল ৬.৩০ টায় কাঠের গম্বুজে আগুন লাগে এবং পড়ে তা সম্পূর্ণ ভবনে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেদটি পড়ুন এখানে

এছাড়া, সংবাদ মাধ্যম ‘এবিপি নিউজ’-এর ইউটিউব চ্যানেলে এই ঘটনার একটি ভিডিও দেখতে পাওয়া যায়।

দ্বিতীয় ছবিঃ ইংরেজি সংবাদ মাধ্যম ‘দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’-এর ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বরের একটি প্রতিবেদনে এর সন্ধান পাই। জানতে পারি, ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর লোকসভা থেকে পাশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলকে (CAB) কেন্দ্র করে দেশজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল শুরু হয়। পোস্টের ভাইরাল এই ছবিটি আসামের গুয়াহাটির একটি CAB-বিরোধী বিক্ষোভ মিছিলের দৃশ্য।

দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রতিবেদন আর্কাইভ

সংবাদ মাধ্যম ‘ইন্ডিয়া টুডে’-এর ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, তারিখের একটি প্রতিবেদন থেকেও একই কথা জানতে পারি। প্রতিবেদন পড়ুন এখানে (আর্কাইভ)।

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল ২০১৯ সালের ১০ ডিসেম্বর লোকসভায় পাশ হয় এবং ১২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি এটিতে স্বাক্ষর করেন।

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল ও ভিত্তিহীন। দুটি পুরনো ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ছবিকে ত্রিপুরা হিংসার সাথে যুক্ত করে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে।

Avatar

Title:দুটি পুরনো অপ্রাসঙ্গিক ছবিকে ত্রিপুরা হিংসার সাথে যুক্ত করে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে

Fact Check By: Rahul A

Result: False