সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ছবিকে শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে গলায় দড়ি লাগানো ছবির এই ব্যক্তি হলেন হ্যাকার হামজা বেনদেলাজ যাকে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল। এই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা রয়েছে,
“ফাঁসির দড়ি গলায় পড়ার পরেও এমন হাঁসিমুখে থাকা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। এই সেই হামজা বেনদেলাজ, যিনি ২১৭ টি ব্যাংক থেকে ৪০ কোটি ডলার হ্যাক করেন এবং আফ্রিকা ও ফিলিস্তিনে অনাহারে অর্ধাহারে মরে যাওয়ার উপক্রম মানুষদের মাঝে বিলিয়ে দেন! আদালতে তাঁর ফাঁসির রায় হলে অবশেষে হাসি মুখে ফাঁসিতে ঝুলে পড়েন! আদালতে তার বক্তব্য পরিস্কার ছিল-“আমি কোন পাপ করিনি, গরিবের পেট চাঁপা দিয়ে সমাজের দুর্নীতিবাজরা যে পয়সা ব্যাংক এ জমা রেখেছিল আমি তা গরিবের পেটেই পৌঁছেদিলাম, এটি আমার অপরাধ? স্যালুট হামজা বেনদেলাজ, আজীবন বিড়ালের মত বেঁচে থাকার চেয়ে, একটা দিন বাঘ হয়ে মৃত্যু বরণ করা উত্তম… “

ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো তথ্য যাচাই করে দেখেছে এই দাবিটি ভুয়ো। ছবিতে এই ব্যক্তিটি হামজা বেনদেলাজ নন এবং তিনি এখনও জীবিত আছেন।

Hamja.png
ফেসবুক আর্কাইভ

তথ্য যাচাই

গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে উইকিপিডিয়া থেকে আমরা জানতে পারি যে হামজা বেনদেলাজ হলে একজন আলজেরিয়ান হ্যাকার যিনি বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা হ্যাক করে বিভিন্ন এনজিওকে দান করেছিলেন। তাকে ২০১৩ সালে গ্রেফতার করে আমেরিকায় পাঠানো হয়। সেই সময় তার মৃত্যু নিয়ে গুজব রটলেও এমনটা হয়নি। ২০১৬ সালে তাকে অভিযুক্ত করে ১৫ বছরের জেলের সাজা দেওয়া হয়।

Hamja picx.png
উইকিপিডিয়া আর্কাইভ

আমরা আমেরিকান সংস্থা এফবিআই (FBI) এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে হামজা বেনদেলাজের কোর্টের রায়ের একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। এফবিআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হামজা প্রায় ১০ মিলিয়ন কম্পিউটার হ্যাক করে ১ বিলিয়ন ডলার আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি করেছিলেন। তাকে ২০১৩ সালে থাইল্যান্ড থেকে ধরা হয়েছিল। বেনদেলাজকে ১৫ বছরের জেলের সাজা শোনানো হয়। এই রায়ে তার ফাঁসি নিয়ে কোনও উল্লেখ নেই।

Hamja.png
এফবিআই প্রতিবেদনআর্কাইভ

অন্যদিকে পোস্টে দেওয়া গলায় দড়ি লাগানো ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানতে পারি এই ব্যক্তির নাম মাজিদ কাভোসাফির। তার নাম দিয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা তার পোস্টে দেওয়া ছবিটি গেটি ইমেজেসের সংরক্ষণে খুঁজে পাই।

Ha.png
গেট্টি ইমেজেস আর্কাইভ

রয়টার্স সংবাদ সংস্থার একটি প্রতিবেদন (আর্কাইভ) থেকে আরও জানতে পারি, ইরানের একজন বিচারপতিকে গুলি মেরে হত্যা করার অপরাধে তাকে এবং তার ভাইপোকে ২০০৭ সালে তেহরানে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়।

Reuters hamza.png
প্রতিবেদন আর্কাইভ

নিষ্কর্ষঃ তথ্য যাচাই করে ফ্যাক্ট ক্রিসেন্ডো সিদ্ধান্তে এসেছে উপরোক্ত দাবিটি ভুল। পোস্টে দেওয়া ছবিতে গলায় দড়ি পরানো ব্যক্তিটি হামজা বেনদেলাজ নয়। এবং হামজা বেনদেলাজকে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়নি। ব্যাংক হ্যাক করে টাকা বিলিয়ে দেওয়ার জন্য তাকে ১৫ বছরের জেলের সাজা দেওয়া হয়েছিল। তিনি এখনো জীবিত।

Avatar

Title:ভুয়ো পোস্ট শেয়ার করে দাবি, হামজা বেনদেলাজকে জনসমক্ষে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল

Fact Check By: Rahul A

Result: False